ঢাকা,রোববার, ৫ মে ২০২৪

থানায় ‘খুদে মন্ত্রী’ তটস্থ পুলিশ কর্তা

ডেস্ক রিপোর্ট ::

রাজবাড়ী শেরেবাংলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর (১১) বিয়ে। গতকাল সোমবার সকালে বিদ্যালয়ে এসে এ খবর পেয়ে থানায় ছুটে যায় খুদে মন্ত্রিপরিষদের (স্টুডেন্ট কেবিনেট) সদস্যরা। তারা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে নালিশ করে। ওসি অভিযোগ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে বিয়ে বন্ধ করেন।

গতকাল সকাল ১১টার দিকে রাজবাড়ী থানায় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট কেবিনেটের নির্বাচিত সহসভাপতি ও দশম শ্রেণির ছাত্রী নাতাশা আক্তারের নেতৃত্বে নবম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাত আরা জুঁই ও জেসমিন আক্তার, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী আমেনা আক্তার ও রেজওয়ানা করিম রিমি, সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী শারমিন আক্তার ও আবিদা আক্তার সদর থানার ওসির কক্ষে অবস্থান করছে। তাদের সঙ্গে রয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নুর নাহার রূপা। নাতাশা ছাড়া বাকি সবাই স্টুডেন্ট কেবিনেটের সদস্য।

004124kalerkantho-20-09-16-ns-22

স্টুডেন্ট কেবিনেটের সহসভাপতি নাতাশা আক্তার বলে, ‘ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। অথচ সে ষষ্ঠ শ্রেণির ১০০ ছাত্রীর মধ্যে সপ্তম স্থান অর্জন করেছে। তার জন্ম ২০০৫ সালের ২০ জানুয়ারি। সে হিসাবে বয়স মাত্র ১১ বছর। এত অল্প বয়সে বিয়ের হাত থেকে তাকে বাঁচাতে হবে।’

ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নুর নাহার রূপা বলেন, ‘গতকাল সকালে ওই ছাত্রীর বিয়ের বিষয়টি বিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্রীরা। বিয়ে বন্ধ করতে স্টুডেন্ট কেবিনেটের প্রতিনিধিরা রাজবাড়ী  থানায় আসে। আমি শুধু ছাত্রীদের দেখভাল করছি।’

ওই ছাত্রীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জেলা সদরের চরপাড়া গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে রুমন (২০) রাজধানী ঢাকার একটি শোরুমের কর্মচারী। তাঁর সঙ্গে এ ছাত্রীর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে প্যান্ডেল ও গেট সাজানো এবং শতাধিক লোককে আপ্যায়নে রান্না করা হয়েছে।

রাজবাড়ী থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল বাশার মিয়া বলেন, ‘ছাত্রীরা সাহসিকতার সঙ্গে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে থানায় ছুটে এসেছে। ঘটনাটি মনে রাখার মতো। আমি তাত্ক্ষণিক ওই মেয়ের বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে বিয়ে বন্ধ করি। সে সময় মেয়ের বাবা ও ঘটক পালিয়ে গেলেও মা, চাচা ও মেয়েটিকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ছাত্রীদের সাহসিকতায় আমি মুগ্ধ।’

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বলেন, ‘বাল্যবিয়ে রোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে আমরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মতবিনিময় সভা করেছি। ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা যে সচেতন হয়েছে এবং তারা বাল্যবিয়ে থেকে নিজেদের বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তা এ কর্মকাণ্ডের মধ্যে ফুটে উঠেছে। অন্য বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা যদি এভাবে এগিয়ে আসে, তবে বাল্যবিয়ে রোধ করা সম্ভব।’ -সুত্র, কালেরকন্ঠ

পাঠকের মতামত: